বেঁচে থাকার জন্য বিভিন্ন প্রকার উৎস থেকে আমরা বিভিন্ন ধরনের খাদ্য গ্রহণ করে থাকি। অধিকাংশ খাদ্যবস্তুই দেহে সরাসরি কাজে লাগে না। কারণ খাদ্য হিসেবে আমরা যেগুলো গ্রহণ করি, সেগুলোর অধিকাংশই বৃহৎ অণুবিশিষ্ট এবং এদের রাসায়নিক গঠন অত্যন্ত জটিল প্রকৃতির। খুব সামান্য পরিমাণে কয়েকটি খাদ্যবস্তু যেমন – গুকোজ ও কয়েকটি খনিজ লবণ সরাসরি কাজে লাগে। অধিকাংশ খাদ্যবস্তু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত হয়ে দেহের গ্রহণ উপযোগী সরল উপাদানে পরিণত হওয়ার পর তা শরীরের কাজে আসে। যেমন— ভাতের প্রধান পুষ্টি উপাদান স্টার্চ। ভাত খাওয়ার সাথে সাথেই এই স্টার্চ শরীরের কোনো কাজে আসবে না। কারণ স্টার্চ অনেক গুকোজ অণুর সমন্বয়ে গঠিত। তাই খাওয়ার পর স্টার্চ ভেঙ্গে গুকোজে পরিণত হলে দেহ গুকোজ শোষণ করে তাপ ও শক্তি উৎপাদন করবে। তেমনি খাদ্যে অবস্থিত বড় বড় প্রোটিন অণুগুলো ভেঙে অ্যামাইনো এসিডে এবং খাদ্যের ফ্যাট ভেঙে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলে পরিণত হওয়ার পর এই সকল সরল উপাদান শোষিত হয়ে সরাসরি দেহের কাজে লাগবে।
বিভিন্ন ধরনের খাবার গ্রহণ (পুষ্টি উপাদানগুলো বিভিন্ন খাদ্যের মধ্যে জটিল অবস্থায় থাকে)
খাদ্য পরিপাক
খাদ্য সরল অবস্থায় পরিণত হয় (পুষ্টি উপাদানগুলো সরল ও শোষণযোগ্য উপাদানে পরিণত হয়)
খাদ্য পরিপাকের পরিণতি
যে কোনো খাদ্য বস্তুকে শরীরে কাজে লাগানোর জন্য খাদ্যের বড় বড় অণুগুলো ভেঙে ছোট ছোট সরল অণুতে পরিণত হওয়া অবশ্যই প্রয়োজন। খাদ্যের এরূপ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত হয়ে দেহের গ্রহণোপযোগী অবস্থায় পরিণত হয় পাচন ক্রিয়া বা পরিপাক ক্রিয়ার মাধ্যমে।
পরিপাক
খাদ্য উপাদানের বৃহৎ ও জটিল অণুগুলো ক্ষুদ্র ও সরল অণুতে রূপান্তরিত হয়ে শরীরে শোষিত হয়ে রক্তস্রোতে মিশে যায়। বৃহৎ উপাদান থেকে ক্ষুদ্র ও সরল উপাদানে পরিণত হওয়ার কাজ বিভিন্ন ধরনের এসিড ও এনজাইমের সাহায্যে ধাপে ধাপে বিক্রিয়ার মাধ্যমে হয়ে থাকে। খাদ্যের এই জটিল উপাদান থেকে সরল উপাদানে পরিণত হওয়া ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘটে থাকে। এই প্রক্রিয়াকে পরিপাক ক্রিয়া বলে।
“যে প্রক্রিয়ায় খাদ্যবস্তুর বৃহত্তর জটিল অণুগুলো বিভাজিত হয়ে বা ভেঙে দেহের উপযোগী ও বিশোষণযোগ্য সরল ও ক্ষুদ্রতর অণুতে পরিণত হয় তাকে পরিপাক (Digestion) বলে”।
এসিড ও এনজাইম
খাদ্যের বৃহৎ ও জটিল অণু
পানি
সরল ও শোষণযোগ্য অণু
পরিপাক ক্রিয়া
পরিপাক ক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্যের কার্বোহাইড্রেট ভেঙে গ্লুকোজে, প্রোটিন ভেঙে অ্যামাইনো এসিড এবং ফ্যাট ভেঙে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলে রূপান্তরিত হয়। এভাবে পরিপাক ক্রিয়ার মাধ্যমে সকল খাদ্যবস্তুই ভেঙে সহজ উপাদানে পরিণত হয় এবং শরীরের পুষ্টি সাধন করে। সকল খাদ্যের পরিপাক ক্রিয়া দেহের পরিপাকতন্ত্রের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় ।
পরিপাকতন্ত্র
মানবদেহে পরিপাক ক্রিয়া শরীরের একটি মাত্র অংগে সংঘটিত হয় না। শরীরের বেশ কয়েকটি অংগ এই কাজের সাথে জড়িত। যেমন দাঁত দিয়ে চর্বনের মাধ্যমে খাদ্যবস্তু ছোট ও নরম করা হয়। অন্ত্রনালির মাধ্যমে চর্বিত নরম খাদ্যবস্তুগুলো পাকস্থলিতে আসে এবং পরিপাক ক্রিয়ার সূত্রপাত ঘটে। পাকস্থলিতে খাদ্যবস্তুর সম্পূর্ণ পরিপাক হয় না, তাই অপরিপাককৃত খাদ্যবস্তুগুলো ক্ষুদ্রান্তে আসে। এখানেই প্রধান পরিপাক কাজ চলে। এরপর বৃহদন্ত্রে খাদ্যবস্তুগুলো প্রবেশ করে এবং পরিপাক ক্রিয়া সম্পন্ন করে। পরিপাকের ফলে উৎপন্ন সরল উপাদানগুলো শরীরের মধ্যে শোষিত হয় এবং যে বস্তুগুলো পরিপাক ও শোষিত হয় না অর্থাৎ অপাচ্য দ্রব্যগুলো দেহ নিষ্কাশন করে। খাদ্যকে দেহের গ্রহণ উপযোগী করার জন্য দেহের বিভিন্ন অংশে এই পরিপাক ক্রিয়া সংঘটিত হয়। “দেহের যে অংশের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যবস্তু গ্রহণ, খাদ্যবস্তুর পরিপাক ও শোষণ এবং অপাচ্য অংশের নিষ্কাশণ ঘটে, তাকে পরিপাকতন্ত্র (Digestive System) বলে।” মানবদেহের পরিপাকতন্ত্রটি পৌষ্টিকনালি ও পৌষ্টিকগ্রন্থি নিয়ে গঠিত।
(পৌষ্টিকনালি + পৌষ্টিকগ্রন্থি)
পরিপাকতন্ত্র ←
পৌষ্টিকনালির অন্তর্গত অঙ্গগুলো হচ্ছে মুখবিবর, গলবিল, অন্ননালি, পাকস্থলি, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্র । আর পৌষ্টিক গ্রন্থিগুলো হচ্ছে লালাগ্রন্থি, যকৃৎ ও অগ্ন্যাশয় ৷
পৌষ্টিকনালি – মুখবিবর হতে মলদ্বার পর্যন্ত খাদ্যবাহী নালিটিকেই পৌষ্টিকনালি বলে। নিম্নে পৌষ্টিকনালির বিভিন্ন অংশের বর্ণনা দেওয়া হলো –
পৌষ্টিকনালির বিভিন্ন অংশ
ক) মুখবিবর (Buccal cavity)
খ) গলবিল (Pharynx)
গ) অন্ননালি (Oesophagus)
ঘ) পাকস্থলি (Stomach)
ঙ) ক্ষুদ্রাস্ত্র (Small Intestine)
চ) বৃহদন্ত্র (Large Intestine)
পৌষ্টিকগ্ৰন্থি
লালাগ্রন্থি, যকৃৎ ও অগ্ন্যাশয় ।
প্যারোটিড লালাগ্রন্থি
অন্ননালি
সাবলিঙ্গুয়াল লালাগ্রন্থি
' সাবম্যান্ডিবুলার লালাগ্রন্থি
যকৃৎ
পিত্তথলি
পিত্তনালি ডিওডেনাম
অগ্ন্যাশয় নালি
ঊর্ধ্বগামী কোলন
জেজুনাম ইলিয়াম সিকাম
অ্যাপেন্ডিক্স
ডায়াফ্রাম
কার্ডিয়াক পাকস্থলী
প্লীহা
পাইলোরিক স্ফিংটার পেশি অঞ্চল
অগ্ন্যাশয়
পাইলোরিক পাকস্থলী
অনুপ্রস্থ কোলন
নিম্নগামী কোলন
রেকটাম
পরিপাকতন্ত্র
পায়ু
কাজ – আমাদের দেহে খাদ্য পরিপাকের সাথে জড়িত অংগগুলো বোর্ডে চিত্রের মাধ্যমে চিহ্নিত কর।
Read more